ভোগদখলীয় জমি জবরদখলের জন্য প্রতিপক্ষের ওপর নির্যাতন

ভোগদখলীয় জমি জবরদখলের জন্য প্রতিপক্ষের ওপর নির্যাতন

স্টাফ রিপোর্টার: নওগাঁর রাণীনগর উপজেলায় শংকরপুর এলাকায় ভোগদখলীয় সম্পত্তি জবরদখলের জন্য প্রতিপক্ষের ওপর হামলা, নির্যাতন, চাঁদা দাবি ও ক্ষেতের ফসল ঝলসে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে। গত সোমবার নওগাঁ জেলা প্রেস ক্লাব মিলনায়তনে ভুক্তভোগী ইয়াছিল আলী নামে এক ব্যক্তি সংবাদ সম্মেলন করে এই অভিযোগ করেন।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে কলেজ শিক্ষক ইয়াছিন আলী বলেন, উপজেলার কামতা মৌজায় পৈত্রিক সূত্রে  এক একর চার শতক ফসলি জমি দীর্ঘ দিন ধরে ভোগদখল করে আসছেন শংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা ইয়াছিন আলী। ওই সম্পত্তি প্রায় ১৫০ বছর ধরে তাঁর বাবা ও পূর্বপুরুষেরা ভোগদখল করে আসছেন। একই গ্রামের বাসিন্দা আনিছুর রহমান ওই সম্পত্তির মালিকানা দাবি করলে তাঁর বিরুদ্ধে ২০০৬ সালে আদালতে একটি বাটোয়ারা মামলা করেন ইয়াছিন আলী। ওই মামলার শুনানি নিয়ে আদালত বিবদমান এক একর জমিতে স্থিতিবস্থা জারি করেন। অর্থাৎ মামলাটি নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাদী ও বিবাদী যে যেভাবে পূর্ব হতে ভোগ দখল করে আসছে সেভাবে ভোগদখল করবে। কিন্তু গত শুক্রবার (১ এপ্রিল) কামতা গ্রামের রাব্বী সরদার ও শংকরপুর গ্রামের সাঈদ আলীর ইন্ধনে আনিছুর রহমান ও তাঁর লোকজন বিষ প্রয়োগ করে ইয়াছিন আলীর ভোগদখল করা এক একর জমির ধান ঝলসে দেয়। এ ঘটনায় আনিছুর ওই জমির মালিকানা দাবি করে ইয়াছিনের বর্গাদার তোজাম্মেল, ইব্রাহিম, আতাউর ও আব্দুল হাইয়ের বিরুদ্ধে পর দিন রাণীনগর থানায় মিথ্যা অভিযোগ করেন।

লিখিত বক্তব্যে তিনি আরও বলেন, ভোগদখলীয় সম্পত্তি দখলে নেওয়ার জন্য গত ৩১ মার্চ আনিছুর রহমানের ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হোসেন আলী লোকজন নিয়ে ইয়াছিনের বাড়িতে হামলা করে তাঁর সন্তান ও স্ত্রীর প্রাণনাশের চেষ্টা করে। হোসেন আলী তাঁর স্ত্রীকে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন। এ সময় গ্রামের লোকজন ছুটে এসে হোসেন আলী ও তাঁর লোকজনের হাত থেকে তাঁর স্ত্রী-সন্তানদের রক্ষা করেন। এ ঘটনায় থানায় মামলা করলে ওই মামলার সাক্ষী ইয়াছিনের প্রতিবেশী আব্দুর রাজ্জাককে গতকাল রোববার সকালে স্থানীয় বাজারে যাওয়ার পথে হোসেন আলী ও তাঁর লোকজন বেধড়ক মারধর করে। গুরুত্বর আহত আব্দুর রাজ্জাক বর্তমানে রাণীনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। গতকাল রাতে মামলার অন্যতম আসামি হোসেন আলীকে গ্রেফতার করে রাণীনগর থানা পুলিশ।

ইয়াছিন আলী বলেন, ‘ভূমিদস্যু আনিছুর ও রাব্বী সরদারের ভয়ে আমি ও আমার পরিবার বর্তমানে গ্রাম ছাড়া অবস্থায় জীবনযাপন করছি। ৫ লাখ টাকা চাঁদা না দিলে আমি বাড়িতে গেলে তারা আমাকে প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে। আমার কথা হলো, জমি জবরদখলের চেষ্টা যাঁরা করছেন, জমি তাঁদের হলে আইনি প্রক্রিয়ায় নিচ্ছেন না কেন? হামলা, নির্যাতনের মতো পথ ধরেছেন কেন? তাঁদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নিয়েও কোনো সু-বিচার পাচ্ছি না। পরিবার নিয়ে বর্তমানে প্রাণ ভয়ে জীবনযাপন করছি।’ সংবাদ সম্মেলনে অন্যদের মধ্যে ইয়াছিনের স্ত্রী সাহারা বেগম, শংকরপুর গ্রামের বাসিন্দা ইব্রাহিম, তোজাম্মেল, আতাউর, আব্দুল হাই প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আনিছুর রহমান দাবি করেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ইয়াছিন ও তাঁর পরিবারের লোকজনের ওপর হামলা ও নির্যাতনের যে অভিযোগ করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে ইয়াছিন আমার বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ করছে। প্রকৃত ঘটনা হচ্ছে, বিবদমান ওই জমি দীর্ঘদিন ধরে আমি ভোগদখল করছি। এবারও ওই জমিতে বোরো ধান লাগিয়েছিলাম। কিন্তু ইয়াছিনের ইন্ধনে তোজাম্মেল, আব্দুল হাই, আতাউর ও ইব্রাহিম আমার ধান ঝলসে দিয়েছে। এ ঘটনায় আমি থানায় অভিযোগ করেছি।’

থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিন আকন্দ বলেন, ‘কামতা মৌজার এক একর সম্পত্তি নিয়ে উপজেলার শংকরপুর গ্রামের ইয়াছিন ও আনিছুরের মধ্যে দীর্ঘ দিন ধরে বিরোধ চলছে। জমি নিয়ে বিরোধের জেরে উভয় পক্ষের একাধিক মামলা চলমান রয়েছে। সম্প্রতি ধান ঝলসে দেওয়া ও মারধরের অভিযোগে দুটি মামলা হয়েছে। গতকাল রোববার হোসেন আলী নামে একজনকে গ্রেফতার করে গত সোমবার আদালতের মাধ্যমে কারা হাজতে পাঠানো হয়েছে। ওই জমি নিয়ে বিরোধের জেরে যাতে আর কেউ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটাতে না পারেন, সেই জন্য নজরদারি বাড়ানো হয়েছে।’

 

 

আপনি আরও পড়তে পারেন